অন্যান্য দেশ 

তাচ্ছিল্যভরে কটাক্ষ করার পরেও কংগ্রেস ও রাহুল মমতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল কেন? নেপথ্যে আসল রহস্য কী!

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল শুক্রবার থেকে কলকাতার রেড রোডে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে অবস্থান ও ধর্না কর্মসূচি নিয়েছেন। গতকালই তিনি এই অবস্থান মঞ্চ থেকে কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন কংগ্রেস আগামী লোকসভা নির্বাচনে ৪০ টা আসন পাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন, বিড়ি শ্রমিকের সমস্যা ওরা কি করে বুঝবে কারণ ওদের সঙ্গে তো জনসংযোগ নেই নিশানায় রাহুল গান্ধী।

মমতার এই কটাক্ষের ২৪ ঘন্টার মধ্যে জবাব দিল কংগ্রেস। যদিও গতকালই রাহুল গান্ধী বলেছেন আসন রফা নিয়ে বাংলায় আলোচনা চলছে, খুব শিগগিরই সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু আজ শনিবার কংগ্রেস নেতা জয় রাম রমেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে যা বলেছেন তা এক কথায় গান্ধী গিরি বলা যেতে পারে। শনিবার জয় রাম রমেশ বলেছেন,‘‘ওঁর দাবি অনুযায়ী, ওঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা। আমরাও তা-ই চাই। তাই মনে হয় আমাদের যা করার তা একজোটে করা উচিত। কারণ মনে রাখতে হবে এই নির্বাচন কোনও স্থানীয় নির্বাচন নয়।’’

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো বুঝে উঠতেই পারেননি কংগ্রেস দল এতটা গান্ধী গিরি করবে। রাহুল গান্ধী যে একজন পরিপক্ক রাজনীতিবিদ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন সেটা এখনো বুঝে উঠতেই পারছেন না তৃণমূল নেত্রী। একদিকে তৃণমূল নেত্রী বিজেপিকে আক্রমণ করছেন অন্যদিকে রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসকে যে ভাষায় আক্রমণ করছেন তাতে এটাই স্পষ্ট হয়েছে বিজেপি বিরোধী জোট তিনি চান না। বাংলার রাজনীতিতে যদি এ কথাটা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে যায় তাহলে আগামী দিনে দিদিমোদির সেটিং এর তত্ত্ব একবার প্রকাশিত হয়ে পড়লে এবং তা যদি জনমানষে প্রভাবিত হয় তাহলে সমূহ বিপদ তৃণমূল কংগ্রেসের। জয় রাম রমেশ বলুন কিংবা রাহুল গান্ধী বলুন কোন রকম বিতর্কিত মন্তব্য না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি শিবিরের লোক এটা সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এতদিন ধরে জাতীয় স্তরে যারা প্রভাবশালী সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার তাঁরা প্রত্যেকেই মনে করতেন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম স্তম্ভ। এখন ওইসব স্বনামধন্য ভাষ্যকাররা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় থেকে ইচ্ছা থাকলেও বিজেপির বিরোধিতা করতে পারছেন না। সেজন্যই কখনো রাহুলের প্রশংসা কখনো রাহুলের বিরোধিতা করছেন। ওই সব সাংবাদিকদের ভাষ্য মতে এর ফলে পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তিনি যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কংগ্রেস এবং রাহুলকে আক্রমণ করছেন সেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বাংলার বিজেপি বিরোধী সাধারন মানুষ ভাবছেন মমতার সঙ্গে বিজেপির সেটিং হয়ে গেছে। এই ভাবনাটা এতটাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে আগামী দিনে তীব্র বিজেপি বিরোধিতা করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যে কোনভাবেই বিজেপির বিরোধী নেত্রী হিসেবে সাধারন মানুষের কাছে আত্মপ্রকাশ করতে পারবেন না বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। আর এতে দুটো কাজ হতে পারে। প্রথমত বিজেপির নেতারা বেশ খানিকটা কোণঠাসা হয়ে যেতে পারে উঠে আসতে পারে বাম কংগ্রেস জোট। দ্বিতীয়তঃ তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির মধ্যে কোন তফাৎ নেই এই বার্তাটা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাবিত হয়ে গেলে বিজেপি যেমন এখানে ব্রাত্য হয়ে যাবে একইভাবে তৃণমূলেরও অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে।

আর মমতার এই রাজনৈতিক কৌশলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিজেপি। তাই এই রাজ্যের বিজেপি মহলে একটু কান পাতলেই শোনা যায় যে আমরা আর যে ক্ষমতায় আসতে পারবো না তাদের মধ্যে একটা হতাশা কাজ করছে। তাঁরা মনে করছেন দিল্লিকে ম্যানেজ করে তৃণমূল নেত্রী এখানে রাজ করে যাবে। দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীদের কিছুই হবে না।

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ